এই লেখায় আইসোটোপ কাকে বলে, বৈশিষ্ঠ্য এবং এর ব্যবহার নিয়ে একদম বিস্তারিত আলোচনা করবো। পুরো লেখাটি পড়ে ফেলুন। আশা করি খুব সহজে বুঝতে পারবেন।
এই লেখায় যা যা আছে
আইসোটোপ কাকে বলে?
যেসব পরমাণুর (নিউক্লাইডের) ভর সংখ্যা আলাদা হলেও প্রোটন সংখ্যা একই তাদের আইসোটোপ বলা হয়। আইসোটোপ শব্দটি এসেছে গ্রিক আইসোস (সমান) এবং টপোস (স্থান) শব্দ দুইটি থেকে। যার অর্থ দাঁড়ায় ‘একই স্থান’।

আইসোটোপগুলো একই মৌলের পরমাণু হওয়ার কারণে পর্যায় সারণীতে একই স্থানে এদের রাখা হয়। যেকোনো মৌলের পরিচয় নির্ধারিত হয় এটার কেন্দ্রে প্রোটনের সংখ্যার ভিত্তিতে। নিউট্রন সংখ্যা যতই হোক না কেন প্রোটন সংখ্যা সমান হলে তাদের একই মৌল হিসেবে ধরা হয়। কারণ পরমাণুতে যতগুলো প্রোটন থাকে ঠিক ততগুলো ইলেকট্রন থাকে আর ইলেকট্রন সংখ্যাই পরমাণুর রাসায়নিক ধর্ম স্থির করে দেয়।
যেমন কার্বনের ৩ টি আইসোটোপ হচ্ছে- কার্বন-১২, কার্বন-১৩ এবং কার্বন-১৪ । এদের সবগুলোর কেন্দ্রে প্রোটন সংখ্যা ৬ হলেও নিউট্রন সংখ্যা যথাক্রমে ৬, ৭ এবং ৮। তাই এদের রাসায়নিক ধর্ম একইরকম হলেও পারমাণবিক ভর আলাদা।
কার্বন-১২ | ৬ টি প্রোটন | ৬ টি নিউট্রন |
কার্বন-১৩ | ৬ টি প্রোটন | ৭ টি নিউট্রন |
কার্বন-১৪ | ৬ টি প্রোটন | ৮ টি নিউট্রন |
কোন মৌলের ভিন্ন ধরনের পরমাণু যাদের পারমাণবিক অথবা প্রোটন সংখ্যা সমান কিন্তু ভরসংখ্যা ভিন্ন তাদেরকে ঐ মৌলের আইসোটোপ বলে। একটি মৌলের প্রতিটি পরমাণুতে নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রোটন ও ইলেকট্রন থাকে। কিন্তু একটি মৌলের সকল পরমাণুর ভর এক নাও হতে পারে। কারণ মৌলের পরমাণুতে বিভিন্ন সংখ্যায় নিউট্রন থাকতে পারে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, হাইড্রোজেনের সকল পরমাণুতে একটি (১টি) করে প্রোটন ও ইলেকট্রন থাকে। নিচের চিত্রগুলো ভালো করে লক্ষ্য করুন-

(ক) হাইড্রোজেনের বেশিরভাগ পরমাণুতে কোনো নিউট্রন নেই, তাই এদের ভরসংখ্যা ১ কিন্তু
(খ) চিত্রের পরমাণুটির মতো হাইড্রোজেনের কিছু পরমাণুতে একটি নিউট্রন থাকে, এদের ভরসংখ্যা ২
(গ) চিত্রের পরমাণুটির মতো হাইড্রোজেনের কিছু পরমাণুতে দুটি নিউট্রন থাকে, এদের ভরসংখ্যা ৩
চিত্রটিতে ৩ টি পরমাণু হাইড্রোজেনের তিনটি আইসোটোপ। একইভাবে, কোন মৌলের ভিন্ন ভিন্ন ধরনের পরমাণু যাদের পারমাণবিক অথবা প্রোটন সংখ্যা সমান কিন্তু ভরসংখ্যা ভিন্ন তাদেরকে ঐ মৌলের আইসোটোপ বলে।
আইসোটোপের বৈশিষ্ট্য
- আইসোটোপগুলোর পারমাণবিক সংখ্যা অর্থাৎ প্রোটন সংখ্যা সমান কিন্তু ভরসংখ্যা আলাদা। আইসোটোপগুলোর রাসায়নিক ধর্ম, যোজ্যতা, ইলেকট্রন – বিন্যাস অভিন্ন।
- আইসোটোপগুলোর ভর, ঘনত্ব, স্ফুটনাঙ্ক, গলনাঙ্ক প্রভৃতি ভৌত ধর্মগুলি পৃথক হয়।
- একই মৌলের বিভিন্ন আইসোটোপগুলো পর্যায় সারণিতে একই অবস্থানে থাকে। তাই এদের সমস্থানিক বলে।
আইসোটোপের ব্যবহার
- চিকিৎসাবিজ্ঞানে ক্যানসার এবং টিউমারের চিকিৎসায় তেজস্ক্রিয় আয়োডিন আইসোটোপ ব্যবহার করা হয়। কৃষিক্ষেত্রে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ ব্যবহার করে উদ্ভিদের বৃদ্ধি এবং রোগ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়।
- তেজস্ক্রিয় কার্বন ( C14 ) আইসোটোপের সাহায্যে পুরাতন গাছ, শিলা,এবং পৃথিবীর বয়স নির্ণয় করা যায়।
- বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ার গতিপ্রকৃতি নির্ণয়ের জন্য তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ (C13 , N15 , O18 , S35 ইত্যাদি) ব্যবহার করা হয়।
- কোবাল্টের আইসোটোপ (Co) ক্যানসার কোশ এবং ম্যালিগন্যান্ট টিউমার ঘটিত কোশ ধ্বংস করতে ব্যবহার করা হয়।
আমাদের আরো লেখা পড়তে লিখবে সবাই হোমপেইজে ভিজিট করুন।
আমাদের আরো ব্লগ