এই লেখায় যা যা আছে
কাপ্তাই কায়াকিং
যারা কাপ্তাইয়ে কায়াকিং এ যাবেন এবং পথঘাট-খরচাপাতি সম্পর্কে ধারণা দরকার তাদের জন্য আমার এই লেখা। আশা করি পুরো লেখা পড়ার পর কিভাবে যাবেন এবং আনুমানিক খরচ কত হবে তা সম্পর্কে একটা ধারণা পেয়ে যাবেন। আমি চেষ্টা করেছি বিস্তারিত যতটুকু পারা যায় ততটুকু লেখার।
কাপ্তাই কায়াকিং এর জন্য খুব ভালো লেগেছিলো। সবার জন্যই সেফ মনে হয়েছে। মোটামুটি রাস্তার পাশে হওয়াতে মেয়েদের নিরাপত্তার জন্য সুবিধাজনক। আমরা সেদিন পাঁচজন বন্ধু গিয়েছিলাম। মাত্র একদিনের পরিকল্পনা। আগেরদিন রাতে চিন্তা করলাম কায়াকিং করতে যাবো। বন্ধুকে কল দেয়ার পর তারাও রাজি হয়ে যায়। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে রওনা দিয়ে দিলাম।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে চট্টগ্রাম শহর এমনিতেই অনেক দূরে। যার কারণে শহরে যেতে যেতেই অনেক সময় চলে গেলো। তারপর সেখান থেকে কাপ্তাই যেতে যেতে প্রায় ১২.৩০ বেজে গিয়েছিলো। দূর থেকে যারা যাবেন তারা একটু সময় নিয়ে রওনা দিবেন। নাহলে মাথার উপরে উঠে যাওয়া সূর্য কত গরম দেয় সেটা ভালো করেই জানেন। ওই সময়ে ছায়া না থাকলে গরমে কায়াকিং করার শখ মিটে যাবে।
তবে আমাদের খুব একটা অসুবিধা হয়নি কেন জানি। লেকের পাড়ের ঠান্ডা বাতাসের কারণেই হয়তো রোদের তাপটা এতোটা গায়ে লাগেনি। যারা সাঁতারে অজ্ঞ তাদের জন্য অসুবিধা হবেনা, কারণ তারা লাইফ জ্যাকেট দিয়ে দেয়। যারা সাঁতার জানেন তাদেরকেও লাইফ জ্যাকেট দেয়া হয়।অর্থাৎ সবাইকেই এটা পড়তে হবে বোটে উঠার আগে।
পড়তে না চাইলে পড়তে হবে। কারণ কোনো দূর্ঘটনা ঘটলে স্বাভাবিকভাবেই দায়টা তাদের উপর এসে পড়বে। তাই বোটে উঠার আগে অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট পড়ে নিবেন।
কায়াকিং এর স্পটে যেভাবে যাবেন
কাপ্তাই কায়াকিং ক্লাবে যেভাবে যাবেন,
- চট্টগ্রাম বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে লিচুবাগানের বাসে উঠতে হবে।।কাপ্তাইয়ের বাসে উঠলেও হবে। যারা চট্টগ্রামের বাইরে থেকে আসবেন তাদেরকে চট্টগ্রাম কিভাবে আসা লাগে তা বলে দেয়া লাগবেনা অবশ্যই। কাপ্তাই যাবার পথেই লিচুবাগান পড়বে। স্থানীয়রা ‘লেচু বাগান’ বলে ডাকে। কাপ্তাই যাওয়ার পথে কায়াকিং ক্লাব পড়ে। আপনারা লিচু বাগানেও নামতে পারেন অথবা সরাসরি কায়াকিং ক্লাবের সামনে নামতে পারবেন। তবে লিচু বাগানে নামলে ২৫ টাকা সিএনজি ভাড়া দিয়ে যেতে হবে(জনপ্রতি) ।তাই বলবো যে কায়াকিং ক্লাবের সামনেই নামবেন।
বাস ভাড়া=৪৫ টাকা জনপ্রতি।
চট্টগ্রাম থেকে কায়াকিং ক্লাবে আরেকটা উপায়ে যেতে পারেন। সিএনজি দিয়ে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে কাপ্তাই রাস্তার মাথায় যেতে হবে।
সিএনজি ভাড়া=৬০ টাকা প্রতিজন। - লিচুবাগানে নামলে জুমে যাবেন বলতে হবে সিএনজিকে।আর কায়াকিং ক্লাবের পাশে নামলে তো আর সমস্যা নাই। ‘জুম’ মানে জুম রেস্তোরাঁ। ভাড়া ২৫/=।
- জুম রেস্তোরা আর কায়াকিং ক্লাব একেবারে কাছাকাছি। জুম রেস্তোরায় ঢুকতে ১০ টাকা লাগবে টিকেট। এক টিকেটে সারাদিন কাটাতে পারবেন। তবে জুম রেস্তোরায় শুধু ছবি তোলার জন্য যেতে পারেন। আর তেমন কিছু নেই। পিকনিক স্পটের মতো আরকি।ওখানে দুপুরে খাওয়াদাওয়া করে নিতে পারেন।
খাবারের দামঃ
ভাত+ফার্মের মুরগী+ডিম ১৫০/= প্রতিজন।
ভাত+দেশি মুরগী+ডিম=২০০/= প্রতিজন।
ভাত+মাছ+ইত্যাদি=২০০/= প্রতিজন।
- ওখানে ঘুরাঘুরি শেষে কায়াকিং ক্লাবে চলে যাবেন। কায়াকিং ক্লাবে একটা ডাবল সিটের বোটের ভাড়া ৩০০ টাকা ঘন্টাপ্রতি। আধ ঘন্টা কায়াকিং করা ১৫০ টাকা। দুইজন বসতে পারবেন এক বোটে। আর স্টুডেন্টদের জন্য আলাদা ছাড়ের ব্যবস্থা থাকে। সেটা জিজ্ঞেস করে নিবেন। কায়াকিং শেষে একটু রেস্ট নিয়ে আসবেন ওখানে। যদি সময়টা বিকেল হয় তাহলে তো কোনো কথাই নেই। এতো সুন্দর পরিবেশ সচরাচর পাবেন না। চমৎকার হালকা ঠান্ডা বাতাস। মন ভালো হয়ে যাবে।
- কায়াকিং শেষে চট্টগ্রামে ফেরত আসবেন উপর্যুক্ত উপায়ে। অর্থাৎ যেভাবে গাড়ি দিয়ে গিয়েছিলেন ওভাবেই আসবেন।
তাহলে কাপ্তাই কায়াকিং ক্লাবে যাওয়া এবং আসা,খাওয়া সব মিলিয়ে আনুমানিক খরচ
৪৫+২৫+১৫০/২০০+৩০০/২+২৫+৪ =৪৪০ থেকে ৪৮০ টাকা। ব্যক্তিগতভাবে অতিরিক্ত কিছু কিনলে সেটা অন্য ব্যাপার।
চট্টগ্রামের বাইরে থেকে যারা আসবেন তারা উপর্যুক্ত খরচের সাথে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আসা যাওয়ার খরচ যুক্ত করে নিবেন। আশা করি আপনাদের আনুমানিক কত খরচ হবে তার ব্যাপারে একটা ধারণা পেয়ে গেলেন। কিভাবে যাবেন তাও পরিষ্কার করে বলা রয়েছে। তাও যদি কোনোকিছু বুঝতে অসুবিধা হয় তাহলে নিচের কমেন্ট বক্সে প্রশ্ন করতে পারেন।
কাপ্তাইয়ে রাতের বেলা থাকা যাবে? কাপ্তাই রাতের বেলায় নিরাপদ?
কাপ্তাইয়ে রাতের বেলাও থাকতে পারবেন।ওদের রুম ভাড়া দেয়। জুম রেস্তোরার আয়ত্বে থাকে ওই রুমগুলো। অথবা আপনি তাবুর ব্যবস্থা করেও থাকতে পারবেন। রাতের বেলা আর ভোরবেলা কিন্তু কাপ্তাই এলাকাটা অন্যরকম সুন্দর।
প্রশংসা না করে পারা যায়না।যারা চট্টগ্রামের বাইরে থেকে আসবেন তারা রাতের বেলা থাকার চিন্তা করে আসতে পারেন। অন্যরকম এক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হবেন আশা করছি।
কাপ্তাইয়ের রাস্তা কি ভালো না খারাপ?
আপনাদের মনে আরেকটা প্রশ্ন আসতে পারে যে কাপ্তাইয়ে যাবার রাস্তা কেমন! এই প্রশ্ন মূলত তারাই করতে চায় যারা একটু আরামপ্রিয় অথবা যারা খারাপ রাস্তায় চলাচল করে অভ্যস্ত না। কাপ্তাইয়ের রাস্তা ভালো। শহর থেকে কাপ্তাইয়ের রাস্তায় উঠতে একটু কষ্ট করা লাগতে পারে। নাহলে বাকি সব ঠিকঠাক।
অবশ্য কখন, কি কারণে রাস্তাঘাটে গর্ত খনন শুরু করে দেয় কে জানে! আমাদের দেশে ভ্রমণ স্পটগুলোর রাস্তাঘাট কেমন হয় তা সবাই মোটামুটি জানেন। সাজেকের রাস্তা ছাড়া বাকি সব রাস্তার অবস্থাই খারাপ থাকে। তাহলে আজ এতোটুকুই থাক। আরেকদিন মহামায়া লেক নিয়ে আপনাদের জানাবো।
আমাদের আরো ব্লগ পড়ুনঃ
- রেস্টুরেন্ট ব্যবসা নিয়ে আলোচনা
- ফ্রিল্যান্সিং করে যেভাবে অনলাইনে আয় করবেন
- ডিজিটাল মার্কেটিং এর খুঁটিনাটি আলোচনা
- যেভাবে ঘরে বসে অনলাইনে আয় করা যায়
- ফার্নিচার তৈরির ব্যবসা শুরু করবেন ভাবছেন?
- একমালিকানা ও অংশীদারি ব্যবসা নিয়ে আলোচনা
- আইফোন কেন এতো জনপ্রিয়
- প্রসেসর সম্পর্কে তথ্যবহুল আলোচনা
- এস ই ও কি এবং কিভাবে (গাইডলাইন)
- মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা
- বিসিএস পরিক্ষার বিস্তারিত তথ্য
- করোনা ভাইরাস সম্পর্কে বিস্তারিত
- অনলাইন ব্যবসা শুরু করবেন ভাবছেন?
ধন্যবাদ।