এই লেখায় যা যা আছে
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কি?
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বলতে একটা প্রতিষ্ঠানের জনশক্তিকে ওই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের জন্য সঠিকভাবে ব্যবহার করা ম্যানেজমেন্টের যে মূল ৫ টি অংশ রয়েছে এর মধ্যে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা (Human Resource Management) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কেন সেটা একটু পরেই বলছি।
কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান বা সেবা পরিবেশনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ (সরকারী বা বেসরকারী অফিস, এনজিও ইত্যাদি) তাদের কাজ সম্পাদন করার জন্য নির্বাহী ও শ্রমিক সংগ্রহ, নির্বাচন, নিয়োগ, পদোন্নতি, ছাটাই করাসহ ইত্যাদি কাজ সঠিকভাবে করার জন্য মানব সম্পদ ব্যবস্থাপক দের নিয়োগ দেন। এটা যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ!
কারণ এরা উৎপাদনশীল এবং সেবা কাজে প্রত্যক্ষভাবে বা সরাসরি জড়িত এবং এদের উপর প্রতিষ্ঠানের উন্নতি এবং অবনতি দুইটাই অনেকটাই নির্ভরশীল! গ্যারি ডেজলার এর মতে, “মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যা কর্মী সংগ্রহ, প্রশিক্ষণ, বেতন ভাতা নির্ধারণ, মূল্যায়ন, শ্রম সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা এবং ন্যায় নিষ্ঠার সাথে সম্পকীত”
হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের ব্যাখ্যা

উদাহরণের সাহায্যে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বুঝে নেই চলুন! ধরুন ‘এবিসি’ একটা প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানে অনেক ডিপার্টমেন্ট আছে। একাউন্টিং, ফাইন্যান্স, মার্কেটিং ইত্যাদি ডিপার্টমেন্ট রয়েছে। এই ডিপার্টমেন্টগুলোর জন্য লোক লাগে।
এই লোকদেরকে নিয়োগ দেয়া থেকে শুরু করে তাদের বেতন-ভাতা নির্ধারণ, তাদেরকে ট্রেইন করানো, প্রয়োজনে ছাটাই করাসহ ইত্যাদি কাজগুলো করে থাকেন মানব সম্পদ ব্যবস্থাপক গণ। আরেকটু সহজভাবে বোঝার জন্য এই কাজগুলোকে সিরিয়ালি বলছি যেন বুঝতে সুবিধা হয়। এখন এই ‘এবিসি’ প্রতিষ্ঠানটির একটা পদ খালি হলো। যে পদটি খালি হলো সেই শূন্য পদটির জন্য তো এখন নতুন লোক লাগবে তাইনা?
এক্ষেত্রে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপগণ যে কাজগুলো করেন সেগুলো হলো,
- প্রথমে জব এনালাইসিস করেন। যে পদটি খালি হয়েছে সেই পদের কাজ কি, সেই পদের জন্য কেমন লোক লাগবে, জবের রিকুয়ারমেন্ট, এপ্লিকেশন করার জন্য এপ্লিকেন্টের কোয়ালিফিকেশন সব এনালাইসিস করেন।
- জব এনালাইজ শেষে জব পোস্টিং করেন। অর্থাৎ জবটির ব্যাপারে পত্রিকা বা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞপ্তি দেন। তারপর এপ্লিকেন্টরা তাদের এপ্লিকেশন বা সিভি জমা দিলে সেগুলোকে স্ক্রিনিং বা বাছাই করে শর্টলিস্ট তৈরি করেন। তারপর শর্টলিস্টেড এপ্লিকেন্টদের পরিক্ষা অথবা ভাইবা নেন। এটাকে রিকুটমেন্ট প্রসেস বলে।
- তারপর সেখান থেকে পারফেক্ট পারসন নেন ওই শূন্য পদটির জন্য। একে বলা হয় সিলেকশন প্রসেস।
- তারপর তাদেরকে অরিয়েন্টেশনের মাধ্যমে কাজ বুঝিয়ে দেয়া, ট্রেইন করানো, তাদের পারফর্মেন্স মূল্যায়ন করা, মোটিভেট করা, তাদের সেফটি নিশ্চিত করা, বেতন-ভাতা নির্ধারণ, শ্রমিক এবং মালিকের মধ্যে ভালো সম্পর্ক বজায় ইত্যাদি কাজ করে থাকেন।
- আবার প্রয়োজনে কর্মী ছাটাইয়ের কাজও করে থাকেন।
এই কাজগুলোকে এইচ আর একটিভিটিজ বলে। আর এসব কাজের মাধ্যমে লোকবলকে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের জন্য সঠিক ভাবে ব্যবহার করাই হলো মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা। উপর্যুক্ত কাজগুলো করা হয় যেন প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য সঠিকভাবে পূরণ হয়।
আর এসব কাজ বা একটিভিটিজগুলো যারা করেন তারাই মানব সম্পদ ব্যবস্থাপক বা এইচ আর বা হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজার।
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার ইতিহাস

‘মানব সম্পদ’ ধারণাটি যথেষ্ট আধুনিক। গত শতাব্দির প্রথম দিকেও কোন প্রতিষ্ঠানের কর্মীদেরকে ‘সম্পদ’ হিসেবে দেখা হত না। তারা ছিলেন শুধুই শ্রমিক এবং উচ্চ পদস্থ কর্তাদের আদেশ পালন করা ছিল তাদের প্রথম ও প্রধান কাজ।
ধীরে ধীরে কোম্পানিগুলো দেশে-বিদেশে বিস্তার লাভ করার পর তারা উপলব্ধি করল যে এই বিস্তৃতি ধরে রাখার কান্ডারী হল তাদের কর্মীগণ। একটি প্রতিষ্ঠানের জনবলই তাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ। এই উপলব্ধি থেকে ‘মানব সম্পদ উন্নয়ন’ ধারণার প্রবর্তন হয়েছে। কোম্পানিগুলো তাদের মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং পরিচর্যা করার জন্য ‘Personnel Administration’ নামক শাখা খুললো, যেটা পরবর্তীতে ‘Human Resource Department বা সংক্ষেপে HRD’ নামে পরিচিতি পেল।
আধুনিক বিশ্বের কোম্পানিগুলোতে কর্মীগণ তাদের উচ্চ-পদস্থদের সাথে নতুন আইডিয়া সহজে শেয়ার করতে পারেন এবং কোম্পানিও এই সৃজনশীল মানুষের বিকাশের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সুবিধা প্রদান করে থাকে।
বাংলাদেশে বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানির (Multi-National Company) হাত ধরে মানব সম্পদ উন্নয়ন (Human Resource Development- HRD) এর যাত্রা শুরু হয় প্রায় ১৫/২০ বছর আগে। বর্তমানে অনেক বাংলাদেশি নাগরিক এই কোম্পানিগুলোর HRD প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর সাথে বাজারে প্রতিযোগীতায় টিকে থাকার জন্য দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও দ্রুত মানব সম্পদ উন্নয়ন শাখা চালু করছে এবং এতে আকর্ষণীয় কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে।
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার জনক কে?
বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে এই ধারনার জন্ম হয়েছিলো। আর ধারণাটা এসেছিলো ফ্রেডরিক উইনস্লো টেইলরের বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা তত্ব থেকে। তখন সারা বিশ্বে শিল্প বিপ্লব শুরু হয়। আর ওই সময়ে তুমুল প্রতিযোগীতা তৈরি হয়। এই প্রতিযোগীতায় টিকে থাকতে তারা অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠানের বাইরের লোকদের দিয়ে কাজ করিয়ে নিতে থাকে।
এতে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রমিকদের মধ্যে চরম অসন্তুষ্টির জন্ম নেয়। এরপরই মূলত মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্ম নেয়। আর বর্তমানে এর পরিধি অনেক বিস্তৃত হয়েছে।
এরপর বিংশ শতাব্দীর মাঝামঝিতে এসে এলটন মেয়ো এই ধারণাকে পূর্ণাঙ্গতা দান করেন। আর এই জর্জ এলটন মেয়োকেই মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার জনক বলা হয়।
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব
প্রতিটা পণ্য উৎপাদনের পেছনে মানুষের হাত রয়েছে। আপনি একটা যন্ত্রকে দিয়ে নির্দিষ্ট কাজ করাতে পারবেন দ্রুত। কিন্তু যখন ক্রিয়েটিভ বা সৃজনশীল কাজের প্রয়োজন হয় তখন মানুষ ছাড়া করা সম্ভব না। কারণ যন্ত্র তাকে সেট করে দেয়া কাজের বাইরে কিছুই করতে পারেনা।
আর উৎপাদন থেকে বিপণন পর্যন্ত মানুষের হাত থাকে। ম্যানেজমেন্ট বা ব্যবস্থাপনার ৫টি গুরুত্বপূর্ণ অংশ রয়েছে। এটাকে ৫এম বলে। এগুলো হলো ম্যান,মানি,মেথডস,মেশিন এবং মেটারিয়াল।
এই ৫ টি অংশের মধ্যে সবার প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশটি হলো ম্যান বা মানুষ। আর এটার সাথেই ডিল করতে হয় মানব সম্পদ ব্যবস্থাপকদের। এটাকে কঠিন বলার কারণ, মেশিন তাকে সেট করে দেয়া কাজের বাইরে কিছু করতে না পারলেও মানুষ পারে!
উপর্যুক্ত অংশগুলোর বাকি সবগুলোই জড়বস্তু। কিন্তু মানুষের মন আছে, মানুষ চিন্তা করতে পারে, সিদ্ধান্ত নিতে পারে। ভিন্ন মানুষ ভিন্ন রকমের হয়। কেউ বেশি বেতন পেলে খুশি হয়, কেউ চাকরির নিরাপত্তা পেলে খুশি হয়, কেউ আবার ট্রাভেলিং সুবিধা দিলে খুশি হয়।
আবার একটা মানুষ চাইলে প্রতিষ্ঠানের আরো ১০ টা শ্রমিককে উষকে কর্মক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু যন্ত্র তা পারেনা। এজন্যই মানুষকে নিয়ে কাজ করা সবচেয়ে কঠিন। আর এই মানুষকে নিয়েই মানব সম্পদ ব্যবস্থাপকদের কাজ! তাই এটার গুরুত্ব বুঝতেই পারছেন আশা করি।
বইয়ের ভাষায় মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা এর গুরুত্ব
আমিতো আমার ভাষায় এর গুরুত্ব বলেছি। অনেকে আবার বইয়ের ভাষায় জানতে চান। তাদের জন্য এই সেকশন। নিম্নে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের গুরুত্ব তুলে ধরা হলো,
১। মানব সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার
একটা প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হলো মানব সম্পদ। এটার উপর প্রতিষ্ঠানের উন্নতি এবং অবনতি দুইটাই নির্ভর করে। তাই এটাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হয়। আর এটার জন্যই হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের প্রয়োজন।
২। বস্তুগত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার
মানুষকে সঠিকভাবে কাজে লাগালে জড়পদার্থ বা বস্তুগত সম্পদগুলোর কর্মক্ষমতাও বেড়ে যায়! কারণ মানুষ সঠিকভাবে কাজ করতে পারলে যন্ত্রও কাজ করতে বাধ্য!
৩। কর্মীর দক্ষতা উন্নয়ন
হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের কাজকে আরো উন্নত করা হয়। এতে প্রতিষ্ঠানের উন্নতি দ্রুত হয়।
৪। ভবিষ্যতের উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা
বর্তমানের মানব সম্পদকে কিভাবে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আরো উন্নত করা যায় সেই চেষ্টা করে থাকেন মানব সম্পদ ব্যবস্থাপকরা। এজন্য বর্তমান ছাড়াও ভবিষ্যতের পরিকল্পনা গ্রহন করা যায়।
৫। প্রতিষ্ঠানের জন্য উপযুক্ত কর্মী সংগ্রহ
প্রতিষ্ঠানের জন্য কেমন লোক লাগবে সেই মোতাবেক লোক নিয়োগ করা হয়। এতে প্রতিষ্ঠানের ভালো করার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
৬। সমন্বয় সাধন করা
বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের মধ্যকার সমন্বয় সাধন এবং সম্পর্কের উন্নয়নে কাজ করে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজাররা।
৭। মজুরী বা বেতন-ভাতা নির্ধারণ
প্রতিষ্ঠানের কর্মী অথবা শ্রমিকদের বেতন ভাতা নির্ধারন করতে কাজ করেন উনারা। এতে বেতন ভাতা নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়না। তবে বাংলাদেশে এই সমস্যার তেমন সুরাহা হয়েছে বলে মনে হয়না। বড় বড় প্রতিষ্ঠানে এসব সমস্যা তেমন না হলেও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে প্রচুর সমস্যা এখনো আছে।
মানব সম্পদ পেশায় কাজের ধরন কেমন হয়?

প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক কর্মপরিধি যেমনই হোক না কেন মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগে কর্মরতদের কাজের ধরণ প্রায় একই রকম। যে কোন প্রতিষ্ঠানেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এই বিভাগের কর্মকর্তারা। স্ব- স্ব প্রতিষ্ঠানের লোকবল এবং তাদের বিস্তারিত তথ্য সংরক্ষণ এবং প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সামনে যথাযথ তথ্য উপস্থাপন করাই হলো একজন মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কর্মীর মূল কাজ।
যার ফলে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগে কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী সবার কাছেই গুরুত্বপূর্ণ, এমনকি সম্মানেরও পাত্র হিসেবেও বিবেচিত হয়ে থাকেন। তাই বাংলাদেশের তরুণদের কাছে এই ক্ষেত্রটিতে কাজ করার চাহিদা দিনকে দিন বাড়ছে। প্রতিষ্ঠানের কর্মী নিয়োগ, বদলি, প্রমোশন, প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ, কর্মীদের কার্যপরিধি নির্ধারন থেকে শুরু করে কর্মীদের প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ-সুবিধা যেগুলো তারা প্রতিষ্ঠান থেকে পেয়ে থাকেন যেমন – বাৎসরিক ছুটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড, বেতন, অবসর ভাতা, বোনাস প্রভৃতির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা করে থাকেন এই বিভাগের কর্মকর্তারা।
কর্মীদের কাজের মূল্যায়ন ও তাদের কাজের প্রেরণা সৃষ্টির জন্য দক্ষ কর্মীদের পুরস্কার প্রদানের পাশাপাশি যারা কর্মক্ষেত্রে অবহেলা করে তাদের সঠিক পরামর্শ প্রদানও এই বিভাগের কাজ।
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা চাকরি করার যোগ্যতা
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপক পেশায় যারা প্রবেশ করতে চান তাদের কিছু প্রাথমিক যোগ্যতা থাকা বাধ্যতামূলক। শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম স্নাতক পাশ হতে হবে। ব্যবসায় শিক্ষা ও এইচআরএম বিষয়ে ডিগ্রিধারী ব্যক্তিরা প্রাধান্য পেলেও অন্য বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ ব্যক্তিরা এ পেশায় আসতে পারেন।
প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি নেতৃত্বগুণ, সদালাপ, ধৈর্য্য, সমস্যা সমাধানে পারদর্শিতা এবং দেশের শ্রম আইন সম্পর্কে ধারণাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
একজন হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট অফিসারের ভাল যোগাযোগ দক্ষতা ও অন্যের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা বোঝার ক্ষমতা থাকা আবশ্যক। কর্মজীবনে একজন হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট অফিসারের সবার নিকট গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসী হতে হয়। নিজ প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান ও সেই আনুযায়ী মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা করতে হয় এই বিভাগের কর্মীদের।
হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট জবে প্রারম্ভিক বেতন কাঠামো
প্রতিষ্ঠানভেদে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের এন্ট্রি লেভেল অফিসার হিসেবে আপনার বেতন হতে পারে সর্বনিম্ন ১৫ হাজার টাকা, এর সাথে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থাকতে পারে। পরবর্তী পদোন্নতি নির্ভর করবে আপনার কাজের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার উপর। তবে অনেক কোম্পানির ক্ষেত্রে কিছুটা হের-ফের হতে পারে।
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপক হিসেবে যে ধরনের প্রতিষ্ঠানে কাজ করা যায়
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা পেশায় আসার আগে অবশ্যই যেসব প্রতিষ্ঠানে এই বিভাগ রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা রাখা উচিত। সাধারণত বড় বড় দেশী এবং বহুজাতিক কোম্পানি গুলোতে এই বিভাগের পরিপূর্ণ কার্যক্ষেত্র রয়েছে। বিশেষ করে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, ব্যাংক, ওষুধ কোম্পানী, মিডিয়া হাউজ, প্রকাশনা সংস্থা, টেলিকমিউনিকেশন, এনজিও, এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানে এ বিভাগটির সুবিস্তৃত কার্যক্ষেত্র রয়েছে।
সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন পর্যন্ত মানব সম্পদ উন্নয়ন নামে কোনো বিভাগ না থাকলেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ‘ট্রেইনিং’/ ‘প্ল্যানিং’/ স্ট্যাটিসটিক্স’ ইত্যাদি বিভাগগুলোতে মূলত মানব সম্পদ উন্নয়ন সম্পর্কিত কাজগুলোই করা হচ্ছে। এই বিভাগগুলোর নীতিমালাগুলো তৈরী করে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়, এবং সরকার কর্তৃক তা অনুমোদিত হয়।
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনায় পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণ নিবেন কোথায়
বাংলাদেশে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ, এমবিএ কোর্সের মধ্যে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বা এইচআরএম বিষয়টি পড়ানো হয়ে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে PGDHRM (Post Graduate Diploma in Human Resource Management) ডিগ্রি নেওয়া যায়। বর্তমানে বিভিন্ন চাকুরিদাতাই এই ডিগ্রিকে বেশ গুরুত্বের সাথে দেখেন। যেসব প্রতিষ্ঠান এই প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল:
- বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট, সোবহানবাগ, মিরপুর, ঢাকা
- বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, ফার্মগেট, ঢাকা
- ইনস্টিটিউট অব পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট, ফার্মগেট, ঢাকা এবং
- বিয়াম ফাউন্ডেশন, নিউ ইস্কাটন, ঢাকা
এই প্রশিক্ষণগুলো ৬ থেকে ৯ মাস ব্যপী হয়। এগুলোতে ভর্তি হওয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম স্নাতক (অনার্স) পাশ।
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় পেশা এবং এর জন্য প্রস্তুতি নেওয়াও তুলনামূলক সহজ। তবে যেকোন প্রতিষ্ঠানে চাকরি শুরু করার আগে সেই প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়াটা অত্যাবশ্যক।
এটাকে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট নামে কেন ডাকা হয়?
এখানে তিনটা শব্দ রয়েছে। মানব(Human), সম্পদ(Resource) এবং ব্যবস্থাপনা(Management)।

মানব(Human) অর্থ প্রতিষ্ঠানের জন্য স্কিলড কর্মী, নির্বাহী ইত্যাদি। এখানে মানব মানে শুধু মানুষকেই বোঝানো হচ্ছেনা। বোঝানো হচ্ছে স্কিলড মানুষ।
সম্পদ(Resource) অর্থ যা সাধারণত কম পাওয়া যায়। কোটি কোটি মানুষ আছে পৃথিবীতে। তবে স্কিলড মানুষের খুব অভাব।
ব্যবস্থাপনা(Management) অর্থ হলো এই মানব সম্পদকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা।
অর্থাৎ মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার মানে স্কিলড মানুষকে আরো স্কিলড করে গড়ে তুলে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন করতে সাহায্য করা। নামটা এভাবেই এসেছে।
বাংলাদেশে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা র বিস্তৃতি একটু ধীর গতিতে আগাচ্ছে। আশা করা যায় এর গতি আরো বাড়বে এবং প্রতিষ্ঠানগুলো স্কিলড লোক নিয়োগ দিয়ে তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে।
আমি চিন্তা করেছি এইচ আর এম নিয়ে ধারাবাহিকভাবে লিখবো এবং ভিডিও পাবলিশ করবো। আজকের যে নামগুলো বলেছি যার ব্যাখ্যা দেইনি সেগুলো নিয়ে সিরিজ আকারে ভিডিও দিবো এবং লেখাও পাবলিশ করবো।
আমাদের আরো লেখা পড়তে পড়ুন